এস এ রেকর্ড ও অন্যান্য ভূমি রেকর্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
ভূমি বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী প্রত্যেকেরই জানা দরকার। “দাগ”, “খতিয়ান”, “পর্চা”, বিভিন্ন ধরণের রেকর্ড, জরিপ, খতিয়ান ইত্যাদি বিষয়ের জরুরী সব তথ্য জানবো। ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে যে জরিপ বা রেকর্ড নিয়ে বেশি চর্চা হয় সেটি হলো SA জরিপ, এস এ রেকর্ড বা, SA খতিয়ান। প্রথমে জেনে নিই খতিয়ান কি বা খতিয়ান কাকে বলে।
“খতিয়ান” কাকে বলে / “পর্চা” কি?
ভূমি জরিপকালীন সময়ে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণপত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে “খতিয়ান” বলে। রেকর্ড বা জরিপের ভিত্তিতে ভূমির মালিকানা সম্বলিত পূর্ণ বিবরণী পত্রই খতিয়ান হিসেবে পরিচিত। খতিয়ানের প্রাথমিক রুপ অর্থাৎ চূড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিই হলো “পর্চা”।
খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। আমাদের দেশে CS, SA, RS, BS এবং ঢাকা শহরে সিটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এসব জরিপকালে ভূমি মালিকের তথ্য প্রস্তত করা হয়েছে তাকে ঐ জরিপের “খতিয়ান” নামে পরিচিত। যেমন CS খতিয়ান, RS খতিয়ান ইত্যাদি। ভূমি সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুযায়ী সরকারের জরিপ বিভাগ সরেজমিনে জরিপ করে ভূমির মালিকানার যে বিবরণ এবং নকশা তৈরি করে তাই রেকর্ড বা জরিপ। এই রেকর্ড বা জরিপ অনুযায়ী প্রস্ততকৃত খতিয়ান বা স্বত্ত্বলিপিই হলো Record of Rights (RoR) ।
ভূমি জরিপ: CS, SA, RS, BS, কি?
আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত ৪টি ভূমি জরিপ পরিচালিত হয়েছে। জরিপ বা রেকর্ড গুলো হচ্ছে;
1. C.S. -Cadastral Survey
2. S.A. – State Acquisition Survey (1956)
3. R.S. -Revitionel Survey
4. B.S. – Bangladesh Survey (1990)
সি এস জরিপ/রেকর্ড (Cadastral Survey)
সিএস হলো Cadastral Survey (CS) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। অঞ্চল ভেদে এই জরিপকে (DS) জরিপ নামে ডাকা হয়। এস এ রেকর্ড এর আগের জরিপ এটি। একে ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপ বলা হয় যা ১৮৮৮ সাল হতে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়। ব্রিটিশ সরকার এই জরিপ পরিচালনা করে। পাক ভারত উপমহাদেশের অর্থাৎ ভারত, পাকিস্তান এনং বাংলাদেশের সর্ব প্রথম জরিপ হলো এই সি,এস জরিপ Cadastral Survey (CS)।
এই জরিপে বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের দশম অধ্যায়ের বিধান মতে দেশের সমস্ত জমির বিস্তারিত নকশা প্রস্তুত করার এবং প্রত্যেক মালিকের জন্য দাগ নম্বর উল্লেখপুর্বক খতিয়ান প্রস্তুত করার বিধান করা হয়। প্রথম জরিপ হলেও এই জরিপ প্রায় নির্ভুল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। মামলার বা ভূমির জটিলতা নিরসনের ক্ষেত্রে এই জরিপকে বেজ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই জরিপকে সি,এস জরিপ বলে। এর খতিয়ানকে সি,এস খতিয়ান এবং এর নকশাকে সি,এস নকশা বলে।
এস এ রেকর্ড কি ? (State Acquisition Survey)
১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে এস এ রেকর্ড (State Acquisition Survey) পরিচালনা করে। এ সময় সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রদেশে জমিদারী অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। এরং রায়েতের সাথে সরকারের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে জমিদারদের প্রদেয় ক্ষতিপুরণ নির্ধারণ এবং রায়তের খাজনা নির্ধারনের জন্য এই জরিপ করা হয়।
জরুরী তাগিদে জমিদারগন হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ বা খাতিয়ান প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। এই জরিপকে এস,এ জরিপ বা এস এ রেকর্ড বলে। এর খতিয়ানকে এস,এ খতিয়ান এবং এর নকশাকে এস,এ নকশা বলে। দেশের কোন কোন অঞ্চলে নতুন করে এস,এ নকশা সৃষ্টি না করে সি,এস নকশাতেই এস,এ জরিপের কাজ করা হয়েছে। এই জরিপটি পাকিস্তান আমলে হওয়ায় একে P.S. জরিপ বা, (Pakistan Survey) বলা হয়ে থাকে। ১৯৬২/৬৩ সালের দিকে শেষ হয় বলে এই এস এ রেকর্ড ৬২’র রেকর্ড নামেও পরিচিত।
আর এস জরিপ ( Revisional Survey) বা, সংশোধনী জরিপ
সি.এস. জরিপ সম্পন্ন হওয়ার সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। জমি, জমির মলিকানা এবং দখলদার ইত্যাদি হালনাগাদ করার নিমিত্তে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। পূর্বের জরিপের ভুল ত্রুটি সংশোধনের জন্য আর.এস জরিপ এতোটা গ্রহণযোগ্য হয় যে এখনো জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে আর, এস জরিপের উপর নির্ভর করা হয়। এর খতিয়ান ও নকশার উপর মানুষ এখনো অবিচল আস্থা পোষন করে। RS খতিয়ানে ভূমির অংশ কলামে ১৬ আনা অংশ মালিক/মালিকদের মধ্যে বন্টন করা হয়।
বি এস জরিপ (Bangladesh Survey)
বি,এস জরিপ হলো বাংলাদেশের প্রায় সমাপ্ত বা অঞ্চল ভেদে সমাপ্ত ভূমি জরিপ যা এখনো চলমান । বাংলাদেশের কোন কোন স্থানে আর,এস (RS) -Revitionel Survey না হয়েই বি,এস (BS) – Bangladesh Survey পরিচালিত হয়েছে। এই জরিপের নকশা খতিয়ান সমূহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বাস্তবে অনেক ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে।
খতিয়ানে ভূমির অংশ কলামে হাজার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ মালিক/মালিকদের মধ্যে (১.০০০) পূর্ণ অংশ বন্টন করা হয়। এই জরিপকে বি,এস জরিপ বলে। এর খতিয়ানকে বি,এস খতিয়ান এবং এর নকশাকে বি,এস নকশা বলে। এই জরিপকে B.R.S. জরিপও বলা হয়। এস এ রেকর্ড এর খতিয়ানকে বেজ ধরে আদালত বি এস খতিয়ানের সংশোধন করে থাকেন। এ জরিপের খতিয়ান স্থান ভেদে কম্পিউটার প্রিন্ট এ প্রকাশিত হয়।
সিটি জরিপ (City Survey)
সিটি জরিপ এর আর এক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ। আর.এস. জরিপ এর পর বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ক্রমে এ জরিপ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা শহরের জন্য সর্বশেষ ও আধুনিক জরিপ এটি। এ জরিপের খতিয়ান সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটার প্রিন্ট এ প্রকাশিত হয়।
B.D.S. জরিপ (Bangladesh Digital Survey)
এস এ রেকর্ড এর আগে পরে অন্যান্য রেকর্ড সম্পর্কে জানার পরে এবার জানবো বি ডি এস জরিপ সম্পর্কে। বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বি,ডি,এস জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরা এবং উন্নত মানের ডিজিটাল যন্ত্রাংশ ব্যবহারের মাধ্যমে নিখুঁত ভুমি জরিপের উদ্দেশ্যে সরকার এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই সারা দেশে B.D.S. জরিপ সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিভিন্ন রকমের খতিয়ান অনুসন্ধান এবং ভূমি বিষয়ক আপডেটেড তথ্য আপনারা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
বন্ধুরা, আশা করি এস এ রেকর্ড সহ বাংলাদেশের পূর্বাপর ভূমি জরিপ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। কোন পরামর্শ কিম্বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভূমিসেবার প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আমার পেইজ http://ssftoday.com এর সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
আরো জানুনঃ
অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই পদ্ধতি